যাকে অবলম্বন করে ক্রিয়া সম্পাদিত হয়, তাকে পুরুষ বলে। যেমন- আমি, তুমি, সে, এটা ইত্যাদি। পুরুষ ব্যক্তি, বস্তু বা প্রাণী হতে পারে।
পুরুষ কয় প্রকার ও কী কী?
পুরুষ তিন প্রকার। যেমন–
ক. উত্তম পুরুষ
খ. মধ্যম পুরুষ
গ. নাম পুরুষ
ক. উত্তম পুরুষ : ক্রিয়ার কর্তা নিজেকে বুঝাতে যে সর্বনাম ব্যবহার করে, তাকে উত্তম পুরুষ বলে। যেমন– আমি, আমরা ইত্যাদি।
খ. মধ্যম পুরুষ : বক্তা যার সাথে কথা বলে তাকে বুঝাতে যে সর্বনাম ব্যবহার করে, তাকে মধ্যম পুরুষ বলে। যেমন– তুমি, তােমরা, আপনি ইত্যাদি।
গ. নাম পুরুষ : বক্তা যার সম্পর্কে কিছু বলে তাকে বুঝাতে যে সর্বনাম ব্যবহার করে, তাকে নাম পুরুষ বলে। যেমন– সে, তারা, করিম, এটা ইত্যাদি।
পুরুষ শেখার প্রয়োজনীয়তা
পুরুষ শেখা হয় দুটি কারণে। প্রথমত, ব্যক্তিভেদে সর্বনামের রূপভেদ জানা। দ্বিতীয়ত, পুরুষভেদে ক্রিয়ার রূপভেদ জানা। এই দ্বিতীয় কারণটিই প্রধান। একই ক্রিয়ার একই কালের রূপ ভিন্ন ভিন্ন হয় যদি পুরুষ হয় ভিন্ন ভিন্ন। আর এজন্য অর্থাৎ ক্রিয়ার রূপের সঠিক ব্যবহার শেখার জন্য, পুরুষের সাথে ক্রিয়া রূপের সম্পর্ক অবশ্যই জানতে হবে। যেমন ‘খা’ একটি ধাতু। এটিকে সাধারণ বর্তমানকালে যদি ব্যবহার করতে হয়, তা হলে পুরুষভেদে এর রূপ বদলে যাবে। যেমন–
আমি (খা + ই>) খাই। আমরা খাই।
তুই (খা + স্>) খাস্। তোরা খাস্।
তুমি (খা + ও>) খাও। তোমরা খাও।
আপনি (খা + ন>) খান। আপনারা খান।
সে (খা + য়) খাই। তারা খায়।
তিনি (খা + ন >) খান। তাঁরা খান।
তাহলে দেখা গেল যে, একই কালের ক্রিয়া হয়েও পুরুষভেদে ‘খা’ ধাতুটির সাথে বিভিন্ন ক্রিয়াবিভক্তি যুক্ত হয়েছে; খা + ই, খা + স্, খা + ও, খা + ন, খা + য়, খা + ন।
আবার বিভিন্ন কালেও একই ক্রিয়ার রূপ পুরুষ ভেদে পরিবর্তিত হয়। ফলে, কোন ধাতুর সাথে কোন কালে কোন ক্রিয়া বিভক্তি যুক্ত হবে (যেমন- ই, ও, স্, এ, ন) তা নির্ধারিত হবে ক্রিয়ার কর্তার পুরুষ অনুসারে। একই পুরুষের ক্রিয়াও আবার ‘তুচ্ছতা’, ‘আদর’ বা ‘সম্ভ্রম’ অনুসারে পরিবর্তিত হবে। এসব কারণে পুরুষ এবং পুরুষের সাথে ক্রিয়া-বিভক্তির পরিবর্তনের সম্পর্ক ভালভাবে জানতে হবে। আরেকটা জিনিস লক্ষ্য করার মতো। তা হলো, পুরুষভেদে ক্রিয়ার রূপের পরিবর্তন হয়, কিন্তু পুরুষ অপরিবর্তিত থাকলে বচন (Number) ভেদে ক্রিয়ার রূপের কোন পরিবর্তন হয় না। যেমন আমি খাই, আমরা খাই। উভয় বাক্যের কর্তা হলো উত্তম পুরুষ। প্রথমটা একবচন এবং দ্বিতীয়টা বহুবচন। তা সত্ত্বেও ক্রিয়ার রূপ অপরিবর্তিত রয়েছে।
বাক্যে বিভিন্ন পুরুষের প্রয়োগ
উত্তম পুরুষ : ‘আমার এ ঘর ভাঙিয়াছে যেবা আমি বাঁধি তার ঘর।’ ‘আমরা তরুণ, আমরা নবীন, আমরা ছাত্র দল।’
মধ্যম পুরুষ : ‘তুমি কি দেখেছ কভু জীবনের পরাজয়।’ ‘তোমরা ভেবেছ, আমরা বালক অথবা বালিকা কেহ।’
নাম পুরুষ : ‘সে যদি তোরে না করে ক্ষমা দুঃখ করিস না যে।’ ‘নিজেকে তারা হারিয়ে ফেলেছে সকল কাজের মাঝে।’