বাংলা ভাষায় যে সব অব্যয় বা অব্যয় জাতীয় শব্দ কখনো স্বাধীন পদরূপে, আবার কখনো শব্দ-বিভক্তিরূপে বাক্যে ব্যবহৃত হয়ে বাক্যের অর্থ প্রকাশে সাহায্য করে, সেগুলোকে অনুসর্গ বা কর্মপ্রবচনীয় শব্দ বলে। যেমন– হতে, থেকে, চেয়ে, দিয়ে ইত্যাদি।
অনুসর্গের বৈশিষ্ট্য
অনুসর্গের বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপ:
(১) অনুসর্গের নিজস্ব অর্থ আছে। এগুলো অব্যয় পদ।
(২) অনুসর্গ শব্দের পরে বসে ঐ শব্দের সাথে পরবর্তী শব্দের সম্বন্ধ প্রকাশ করে।
(৩) অনুসর্গ বিভক্তির মতো কাজ করে।
(৪) কিছু কিছু অনুসর্গ শব্দ-বিভক্তির মতো ব্যবহৃত হয়ে কারক নির্ণয়ে সাহায্য করে।
অনুসর্গের প্রয়োজনীয়তা
বাংলা ভাষায় অনুসর্গের প্রয়োজনীয়তা অত্যধিক। নিচে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো–
বাংলা ভাষায় অনুসর্গ বিভক্তির মতো ব্যবহৃত হয়। বাংলা ভাষায় যথেষ্ট পরিমাণ বিভক্তি না থাকায় বিভক্তির কাজ অনুসর্গ দিয়ে চালাতে হয়। অন্যদিকে অনুসর্গ দিয়ে কারক নির্ণয় করা যায়। সংস্কৃত ভাষায় এক একটি কারকের জন্যে এক একটি বিভক্তি নির্দিষ্ট থাকে। বাংলা ভাষায় বিভক্তিগুলো দিয়ে সব সময় কারকের বিভক্তির কাজ চালানো যায় না। তাই অনুসর্গ বিভক্তির মতো ব্যবহার করে কারক নির্ণয় করা হয়। কাজেই বাক্যের ভাব সুষ্ঠুভাবে ও পরিপূর্ণভাবে প্রকাশ এবং নতুন শব্দ গঠনের জন্যে অনুসর্গ বিশেষভাবে প্রয়োজন।
অনুসর্গ ও উপসর্গের মধ্যে পার্থক্য কি?
অনুসর্গ ও উপসর্গের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপঃ
অনুসর্গ
- অনুসর্গ সাধারণভাবে অব্যয় হলেও, বিশেষ্য, বিশেষণ বা ক্রিয়া থেকেও সৃষ্টি হতে পারে।
- অনুসর্গ পদের অনুতে বা পরে বসে।
- অনুসর্গ শব্দের সঙ্গে মিশে যায় না, আলাদা শব্দ হিসেবে থাকে।
- অনুসর্গ কারকের বোধ জন্মায়।
- অনুসর্গের স্বাধীন বা স্বতন্ত্র ব্যবহার আছে।
উপসর্গ
- উপসর্গ মাত্রই অব্যয়।
- উপসর্গ পদের আগে বসে।
- উপসর্গ শব্দের সঙ্গে মিশে একশব্দ হয়ে যায়।
- উপসর্গ একই ধাতু থেকে ভিন্ন অর্থবোধক শব্দ সৃষ্টি করতে পারে।
- উপসর্গের স্বাধীন বা স্বতন্ত্র ব্যবহার নেই।