ওয়ার্ডপ্রেস কি? ওয়ার্ডপ্রেস এর সুবিধা। What is WordPress used for?

 ওয়ার্ডপ্রেস (Wordpress) হলো জনপ্রিয় কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (Content Management System)। একে সংক্ষেপে সিএমএস (CMS) বলা হয়। এটি মূলত পিএইচপি এবং মাইএসকিউএল দ্বারা তৈরি ওপেন সোর্স ব্লগিং সফটওয়্যার (Open Source Blogging Software)। ওয়ার্ডপ্রেস দ্বারা কোনাে প্রকার পিএইচপি, মাইএসকিউএল বা এইচটিএমএল জ্ঞান ছাড়াই ওয়েবসাইট বা ব্লগ কয়েক দিনেই তৈরি করা সম্ভব।

ওয়ার্ডপ্রেস এর সুবিধা (Advantages of Wordpress)

  • ওয়ার্ডপ্রেস প্যাকেজ সফটওয়্যারটি ফ্রি এবং ওপেন সোর্স হিসাবে ডাউনলোড করে ব্যবহার করা যায়।
  • কোন প্রকার পিএইচপি এবং এইচটিএমএল কোডিং জ্ঞান ছাড়াই ব্লগিং ওয়েবসাইট তৈরী করা যায়।
  • বিভিন্ন ধরনের প্লাগিন ইন্সটল করে ওয়েবসাইটকে আকর্ষণীয় করে তুলা যায়।
  • ব্লগ পোস্ট ও স্ট্যাটিক সুবিধা আছে।
  • কমিউনিটি ব্লগ সুবিধা রয়েছে।
  • থিম, প্লাগিন ফ্রিতে ডাউনলোড করে ব্যবহার করা যায়।
  • কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিএমএস) হবার ফলে যেকোন ডেটা বা তথ্য সহজেই হালনাগাদ (পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংযোজন বা বিয়োজন) করা যায়।
  • ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহার বান্ধব এবং ব্যবহার প্রণালী খুবই সিম্পল, সার্চ ইঞ্জিন অফটিমাইজেশেন পদ্ধতি ব্যবহার ইত্যাদি।
  • সার্চ ইঞ্জিন বান্ধব।

ফ্রি ওয়ার্ডপ্রেস ডাউনলোড করুনঃ www.wordpress.org/download


ওয়ার্ডপ্রেস এর ইতিহাস

২০০৩ সালের ২৭শে মে ওয়ার্ডপ্রেসের স্রষ্টা ম্যাট মুলেনওয়েগ সর্বপ্রথম এটি প্রকাশ করেন। এবং ডিসেম্বর ২০১১ পর্যন্ত ওয়ার্ডপ্রেস ৩.০ সংস্করণ ৬৫ বিলিয়ন বারের বেশি ডাউনলোড করা হয়েছে। শুরু থেকে এটি ব্লগিং সফটওয়্যার হিসেবে ব্যবহৃত হলেও বর্তমানে ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে অনেক বড় বড় ওয়েবসাইট নির্মান করা হচ্ছে। শুরুর থেকে বলতে গেলে, B2 এবং CAFELOG নামের সংগঠন ওয়ার্ডপ্রেসের অগ্রদূত। ওয়ার্ডপ্রেস তৈরীর পর থেকে ২০০৩ সালের মে মাস পর্যন্ত B2 এবং CAFELOG সংগঠনটি কমপক্ষে ২০০০ ব্লগ হোস্ট করাতে চেয়েছিল। ওয়ার্ডপ্রেস সিএমএস-টি পিএইচপি ফ্রেমওয়ার্ক এবং মাইএসকিউএল ডেটাবেজ এর সমন্বিত রূপ। এটি মাইকেল ভাল্ড্রিঘি কর্তৃক আধুনিকায়ন করা, যিনি বর্তমানে ওয়ার্ডপ্রেস এর ডেভেলপার এবং ওয়ার্ডপ্রেসের অফিসিয়াল অগ্রদূত। সাথে তিনি বি২ইভয়েশন প্রজেক্টের এক্টিভ সদস্য। ওয়ার্ডপ্রেস সর্বপ্রথম ২০০৩ সালে ম্যাট মুলেনওয়েগ এবং মাইক লিটিল কর্তৃক বি২ইভুলুয়েশন এর একটি ছোট প্রোজেক্ট ছিল। আর আমরা বর্তমানে “ওয়ার্ডপ্রেস” যে নামে ধরে বলছি এটা ম্যাট মুলেনওয়েগ এর বন্ধু ক্রিস্টিন সেল্লেক ট্রিমুলেট এর পছন্দ করে দেয়া নাম। ২০০৪ সালে Six Apart কর্তৃক তৈরীকৃত আরেক ব্লগিং সফটওয়্যার Movable Type তাদের ব্যবহার বিধিমালা পরিবর্তন করায় তাদের বেশির ভাগ ব্যবহারকারীরা Movable Type ছেড়ে ওয়ার্ডপ্রেসে যোগ দেয়। আর এটিই ওয়ার্ডপ্রেসের ভাগ্যকে উন্নতি করে দেয়। অক্টোবর ২০০৯, ওপেন সোর্স কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম শেয়ার মার্কেট রিপোর্ট অনুযায়ী দেখা যায় যে, ওয়ার্ডপ্রেস ২০০৯ সালে তাদের টার্গেটের তুলনায় ওপেন সোর্স কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম হিসেবে অধিক জনপ্রিয়তা এবং সফলতা অর্জন করতে সমর্থ হয়েছে। আর এভাবেই ওয়ার্ডপ্রেস আজকের বিশ্বে ব্লগিং সফটওয়্যার হিসাবে জনপ্রিয়তা লাভ করে।


সেরা ১০ ধরণের ওয়েবসাইট যা ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে করা সম্ভব

১. ব্লগ বা ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট (Blog or Personal Website)

শুরুতে ওয়ার্ডপ্রেস একটি সাধারণ ব্লগিং প্ল্যাটফর্ম হিসাবে শুরু হয়েছিল এবং দ্রুত একটি শক্তিশালী সিএমএসে (CMS) রূপান্তরিত হয়েছিল। তবে গত ১২ বছরে, এই ব্লগিং এবং ব্যক্তিগত ওয়েবসাইটের উপাদানগুলি ওয়ার্ডপ্রেস এখনো ব্যবহারের সুযোগ দিচ্ছে।বরং তারা আরও সুন্দর এবং পরিপূর্ণ হয়েছে। আপনি যদি একটি ব্লগ বা ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট তৈরি করতে চান তবে আপনি আপনার ওয়েবসাইটটি দ্রুত লোড হওয়ার জন্য এবং সুন্দর করার জন্য প্রচুর টুলস এবং প্লাগিন পাবেন।


২. ব্যবসায়িক ওয়েবসাইট (Business Website)

অস্থির দেখতে একটি বিজনেজ ওয়েবসাইট বানানোর সহজ প্লাটফর্ম হচ্ছে ওয়ার্ডপ্রেস। এটি এত শক্তিশালী যে অনেক নামীদামী কোম্পানিগুলি তাদের ওয়েবসাইটগুলিতে ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহার করে। এটি আপনাকে দ্রুত কোনও ওয়েবসাইট চালু করে আপনার ব্যবসা প্রসারে সহায়তা করবে।


৩. ই কমার্স (eCommerce)

ওয়ার্ডপ্রেস এর সাহায্যে আপনি খুব দ্রুত এবং সহজে একটি ই কমার্স ওয়েবসাইট বানিয়ে ফেলতে পারেন।  WooCommerce, Easy Digital Downloads এবং WPEcommerce এর মতো দুর্দান্ত কিছু প্লাগইন রয়েছে যা আপনার ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইটকে সম্পূর্ণ কার্যকরী ই কমার্স প্ল্যাটফর্মে পরিণত করে ফেলবে। আপনি ঘরে বসে থেকে ব্যবহারকারীদের পেমেন্ট গ্রহণের পাশাপাশি শিপিং, ট্যাক্স ইত্যাদি পরিচালনা করতে পারেন ।


৪. প্রশ্নোত্তর ওয়েবসাইট (Q&A Website)

Yahoo Answers, Stack Exchange, or Quora এর মত ওয়েবসাইট তৈরি করতে চান? তাহলে ওয়ার্ডপ্রেস হচ্ছে আপনার জন্য সবচেয়ে সহজ সমাধান। ওয়ার্ডপ্রেসের সাহায্যে আপনি সহজেই একটি প্রশ্নোত্তর সাইট তৈরি করতে পারেন । এটিকে অন্যান্য টুলস এর সাথে সমন্বয় করে আপনি নিজের একটি উন্নত অনলাইন কমিউনিটি তৈরি করতে ফেলতে পারেন।


৫. পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট (Portfolio Websites)

আপনার কাজগুলোকে সহজে মানুষের কাছে পৌছানোর জন্য একটি ভাল প্ল্যাটফর্ম দরকার? আপনি আকর্ষণীয় ফটো গ্যালারী এবং সুন্দর স্লাইডার সহ আপনার ওয়ার্ডপ্রেস সাইটে সহজেই একটি পোর্টফোলিও যুক্ত করতে পারেন । এতে করে মানুষজন সহজেই আপনার ওয়েবসাইটে ভিজিট করার মাধ্যমে আপনার কাজগুলোকে দেখতে পারবে।


৬. অনলাইন কমিউনিটি (Online Communities)

বিবিপ্রেস ফোরাম ব্যবহার করে ওয়ার্ডপ্রেস একটি অনলাইন ফোরাম তৈরি করা যেতে পারে । এমনকি আপনি BuddyPress এর মতো প্লাগইন ব্যবহার করে আপনার ওয়ার্ডপ্রেস সাইটকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিণত করতে পারেন।


৭. বহুভাষাভাষি ওয়েবসাইট (Multilingual Websites)

আপনি অনেক ভাষায় যেমন ওয়ার্ডপ্রেস ইনস্টল করতে পারেন তেমনি আপনি একটি বহুভাষিক ওয়েবসাইটও তৈরি করতে পারেন। ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহার করে বহুভাষিক ওয়েবসাইট তৈরি করা কতটা সহজ তা অন্য একদিন দেখাব।


৮. ফটোগ্রাফি ওয়েবসাইট (Photography Websites)

আপনি কি পেশাদার বা অপেশাদার ফটোগ্রাফার? আপনার পরিবারের ছুটির ছবিগুলি সবার সাথে শেয়ার করতে চান? ওয়ার্ডপ্রেস এবং Envira Gallery দিয়ে আপনি চমকপ্রদভাবে সুন্দর একটি ফটোগ্রাফি ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারেন। আপনি গ্যালারী, অ্যালবাম, টাইটেল, ক্যাপশন, লাইটবক্স পপআপ, স্লাইডশো হুইসেল ইত্যাদি যুক্ত করতে পারেন।


৯. স্কুল বা কলেজ ওয়েবসাইট (School or College Websites)

ওয়ার্ডপ্রেসের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে হাজার হাজার স্কুল এবং কলেজ ওয়েবসাইট তৈরি হয়। এটি নিরাপদ, সুরক্ষিত এবং পরিচালনা করা সহজ। সো আপনিও চাইলে খুব সহজেই ওয়ার্ডপ্রেসের মাধ্যমে একটি প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট খুব সহজেই তৈরি করে ফেলতে পারেন।


১০. ব্যক্তিগত ব্লগ (Private Blogs)

একটি ব্যক্তিগত ব্লগ আপনার নিজস্ব ব্যক্তিগত ডায়েরি বা জার্নাল হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। তাছাড়া আপনার পারিবারিক ইভেন্টগুলি, বিবাহের ফটো, শিশুর ছবি ইত্যাদি সবার সাথে শেয়ার করার জন্যও আপনি একটি ব্যক্তিগত ব্লগ ব্যবহার করতে পারেন।

*

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post