শব্দের সবচেয়ে ক্ষুদ্র অংশকে ধ্বনি বলে। ধ্বনি তৈরি হয় বাগযন্ত্রের সাহায্যে। ধ্বনি তৈরিতে যেসব বাক্-প্রত্যঙ্গ সহায়তা করে সেগুলো হলো– ফুসফুস, গলনালি, জিহ্বা, তালু, মাড়ি, দাঁত, ঠোঁট, নাক ইত্যাদি। ধ্বনি দুই প্রকার। যথা- ১. স্বরধ্বনি ও ২. ব্যঞ্জনধ্বনি।
১ স্বরধ্বনিঃ. যে ধ্বনি উচ্চারণের সময় ফুসফুস থেকে বাতাস বেরিয়ে যেতে মুখবিবরে কোথাও বাধা পায় না; তাকে স্বরধ্বনি (Vowel sound) বলে। অন্য কথায়, যে সকল ধ্বনি অন্য ধ্বনির সাহায্যে ছাড়া স্বয়ংসম্পূর্ণ রূপে স্পষ্ট উচ্চারিত হয়, তাদের স্বরধ্বনি বলে।
বাংলা ভাষায় মৌলিক স্বরধ্বনি সাতটি অ, আ, ই, উ, এ, অ্যা, ও।
স্বরধ্বনির লিখিত রূপ স্বরবর্ণ। বাংলা ভাষায় স্বরবর্ণ ১১টি– অ, আ, ই, ঈ, উ, ঊ, ঋ, এ, ঐ, ও, ঔ।
‘অ্যা’ ধ্বনির জন্য কোনো স্বতন্ত্র বর্ণ বা চিহ্ন নেই।
ব্যাখ্যাঃ এই এগারটির মধ্যে ই-ঈ উচ্চারণে একটি (ই), উ-ঊ উচ্চারণে একটি (উ), ‘ঋ’ উচ্চারণে ‘রি’ বলে ধ্বনির দিক থেকে বিজ্ঞানসম্মতভাবে একে স্বরধ্বনি স্বীকার করা যায় না। ব্যঞ্জনধ্বনির ‘র্’ এবং স্বরধ্বনির ‘ই’ মিলে হয়েছে ‘ঋ’ (রি)।
‘এক’, ‘দেখা’, ‘দেয়’ শব্দগুলো উচ্চারিত হয় ‘অ্যাক’, ‘দ্যাখা’, ‘দ্যায়’ রূপে। তাই ‘অ্যা’ একটি স্বরধ্বনি।
‘ঐ’ এবং ‘ঔ’ স্বরবর্ণ দুটির উচ্চারণ ‘অই’ বা ‘ওই’ এবং ‘অউ’ বা ‘ওউ’-এগুলো যৌগিক স্বরধ্বনি। তাই এগুলো বর্ণ হিসেবে ব্যবহৃত হলেও পৃথক স্বরধ্বনি হিসেবে গ্রহণ করা হয় না।
ধ্বনি কীভাবে তৈরি হয়?
মানুষের কথা হলো অর্থযুক্ত ধ্বনি। কথা বলার সময় মানুষের মুখ দিয়ে যেসব ধ্বনি বের হয় তার অবশ্যই অর্থ থাকতে হবে। কেননা অর্থযুক্ত ধ্বনিই হলো শব্দ। বাগযন্ত্রের সাহায্যে ধ্বনিগুলো উচ্চারিত হয়। ধ্বনি উচ্চারণের জন্য যেসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কাজ করে সেগুলো হলো– ফুসফুস, স্বরতন্ত্রী, গলনালি, জিভ, তালু, মাড়ি, দাঁত, ঠোঁট, নাক ইত্যাদি। ফুসফুস থেকে বাতাস স্বরতন্ত্রী, মুখ বা নাকের মধ্যদিয়ে বেরিয়ে আসার সময় জিভ, তালু, মাড়ি, দাঁত, ঠোঁট প্রভৃতিতে নানাভাবে বাধা পায় এবং তাতে বিভিন্ন ধ্বনি উচ্চারিত হয়।