স্বরভঙ্গি কি? স্বরভঙ্গির প্রয়োজনীয়তা

 আমরা কথা বলার সময় কান্না-হাসি, সুখ-দুঃখ, আবেগ-উচ্ছ্বাস, শাসন-তিরস্কার, অনুরোধ-মিনতি প্রকাশের জন্য কণ্ঠস্বরের নানা ভঙ্গি করি। কণ্ঠস্বরে কখনও কাঁপন সৃষ্টি হয়, কখনও স্বরকে উঁচুতে তুলি, কখনও নামিয়ে দেই, কখনও বা টেনে টেনে কথা বলি, আবার কখনও কোনো শব্দের ওপর বিশেষ জোর দিয়ে বলি। বিশেষ বিশেষ ভাব ও অর্থ প্রকাশের জন্য কণ্ঠস্বর নানা ভঙ্গিতে ওঠানামা করে, কণ্ঠস্বরের বিভিন্ন ভঙ্গির ফলে স্বরতরঙ্গ বা ধ্বনিতরঙ্গ সৃষ্টি হয়। এই স্বরতরঙ্গকে স্বরভঙ্গি বলা হয়। নিচে লেখা বাক্যগুলো সঠিকভাবে উচ্চারণ করে স্বরভঙ্গির পার্থক্য লক্ষ করঃ

(১) অ-নে-ক অ-নে-ক দিন আগের কথা বলছি।

[টেনে টেনে বলাতে ‘অতি দীর্ঘ কাল’ বোঝাচ্ছে।]

(২) দৃশ্যটা খু-উ-ব সুন্দর। [টেনে বলাতে ‘অত্যন্ত বেশি’ বোঝাচ্ছে।]

(৩) যাও। [আদেশের সুর ফুটে ওঠেছে।]

(৪) যাও না, লক্ষ্মীটি। [আদর বা অনুনয়ের সুর পরিস্ফুট।]

(৫) ছেলেটির নাম জান কী? [প্রশ্ন বোঝাচ্ছে।]

(৬) তার নাম জামান। [সাধারণভাবে কথা বলে নাম জানানো হল।]

(৭) কী খাবে? [কোন দ্রব্য খাবে জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে।]

(৮) খাবে নাকি? [খাবে কি না জিজ্ঞাসা করা হয়েছে।]

(৯) খাব না বলছি। [বিরক্তি প্রকাশক বাক্য।]

(১০) তাই নাকি? [সন্দেহ প্রকাশে প্রশ্ন।]

আবার দেখ ‘আনিস ঢাকা যাবে।’ – স্বরভঙ্গির সাহায্যে এই শব্দ তিনটির নানা রকম অর্থ করা যায় :

(১) আনিস ঢাকা যাবে। [সাধারণভাবে একটি সংবাদ জানানো।]

(২) আনিস ঢাকা যাবে? [‘আনিস’ শব্দের ওপর জোর দিয়ে উচ্চারণের ফলে আনিস যে যাবে সে সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ পাচ্ছে।]

(৩) আনিস ঢাকা যাবে! [আনিস ঢাকা যাবে শুনে বিস্ময় প্রকাশ করা হয়েছে।]

স্বরভঙ্গির সংজ্ঞাঃ কণ্ঠস্বরের উঠানামা, কম্পন প্রভৃতির দ্বারা বাক্যের অর্থবৈচিত্র্য সৃষ্টির ভঙ্গি বা ধরনকে স্বরভঙ্গি বলে।

অথবা, মনের বিভিন্ন ধরনের ভাব প্রকাশের জন্য কণ্ঠস্বরে যে ভঙ্গি তৈরি করা হয় তাকে স্বরভঙ্গি বলে।

স্বরভঙ্গির প্রয়োজনীয়তা

বক্তৃতা বিশেষত অভিনয়ে স্বরভঙ্গির প্রয়োজনীয়তা অসামান্য।

স্বরভঙ্গির দ্বারা আদেশ, অনুরোধ, ক্রোধ, বিরক্তি, সন্দেহ, আদর, বিস্ময়, লজ্জা, ঘৃণা, আনন্দ, দুঃখ প্রভৃতি অনুভূতি প্রকাশ করা সম্ভব।

*

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post

Search Ads